অন্যরকম খবরঃ বউভাতে খরচ বাঁচিয়ে বই বিলাচ্ছেন মাধব চন্দ্র

 অন্যরকম খবরঃ বউভাতে খরচ বাঁচিয়ে বই বিলাচ্ছেন মাধব চন্দ্র

বিয়ে মানেই যেন জমকালো উৎসব আর খাওয়াদাওয়ার বিশাল আয়োজন। সামর্থ্য অনুযায়ী এমন আয়োজনের চেষ্টাও থাকে প্রায় সবার। তবে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার মাধব-সাথী দম্পতি। নিজেদের বউভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন কিছুটা সীমিত করে তাঁরা খরচ বাঁচিয়েছেন। আর সেই টাকায় তাঁরা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গল্প, উপন্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের বই।

গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে চিতলমারী সদর ইউনিয়নের কালশিরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাখন লাল ব্রাহ্মণের ছেলে মাধব চন্দ্র ব্রাহ্মণের সঙ্গে রায়গ্রামের অমল ঢালীর মেয়ে সাথী ঢালীর বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাসের মাথায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার এই দম্পতি পাঁচ শতাধিক বই নিয়ে হাজির হন কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয়ে। বেলা তিনটায় কলেজের নগেন্দ্র-মধুমালা মিলনায়তনে বর্তমান শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন বিভিন্ন লেখকের বই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার রায়, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চিতলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়ালসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর চিতলমারী সদর ইউনিয়নের কালশিরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাখন লাল ব্রাহ্মণের ছেলে মাধব চন্দ্র ব্রাহ্মণের সঙ্গে রায়গ্রামের অমল ঢালীর মেয়ে সাথী ঢালীর বিয়ে হয়। পরদিন রেওয়াজ অনুযায়ী বরের বাড়িতে হয় বউভাতের আয়োজন। তবে বর মাধনচন্দ্রের আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল বিয়ের পর তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর স্কুল-কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের বই উপহার দেওয়ার।

শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছেন মাধব-সাথী দম্পতি।

মাধব চন্দ্র ব্রাহ্মণ  বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী বিয়ের পরদিন বরের বাড়িতে হয় বউভাতের আয়োজন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, খাবারদাবার আয়োজনে অনেক বেশি খরচ করবেন না। সেই টাকা দিয়ে তিনি যেসব স্কুল-কলেজে পড়েছেন, তাঁর স্ত্রী যেসব জায়গায় পড়েছেন, সেখানের সব বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে একটি করে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বই উপহার দেবেন। বিষয়টি তিনি স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনিও সাড়া দেন।

May be an image of 1 person and text

মাধব চন্দ্র বলেন, ‘কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয়ে আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই পড়েছি। তাই এখান থেকে শুরু করলাম। পর্যায়ক্রমে আমাদের পড়ালেখা করা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে বই উপহার দিতে চাই। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা জেনেছি এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।’

মাধব চন্দ্রের বাবা মাখন লাল ব্রাহ্মণ বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্রাবস্থা থেকেই এই বইয়ের সঙ্গে খুব সম্পৃক্ত। বাড়িতে পাঠাগার করেছে। বই বিলায়, বই পড়ায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। গাছ বিতরণ করে, আশপাশের গ্রামে কোনো নতুন শিশু জন্ম নিলে তাদের বাড়িতে গাছ উপহার দেয়।’

নিজেদের কলেজের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছেন মাধন চন্দ্র ও সাথী ঢালী।

মাধব চন্দ্র বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) শাখায় কর্মরত। তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো বউভাতের অনুষ্ঠান বড় করে আরও অনেক মানুষকে আনতে পারতাম। তা না করে আমি সংক্ষেপে করে ওই টাকা থেকে এই কাজ করছি। কলেজ, হাইস্কুল, প্রাথমিক মিলেয়ে প্রায় সাড়ে ৮০০ বই উপহার দিতে চাই। আরও হয়তো কিছু বাড়বে।’

কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাধব ও সাথীর এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সবার জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। শিক্ষার্থীদের বই পড়া উৎসাহ ও আলোকিত মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ করতে এই উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাধব ও তার বন্ধুরাসহ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলে প্রতিবছর নবীনবরণে শিক্ষার্থীদের গাছের চারা উপহার দেয়। আমি তাদের জন্য প্রার্থনা করি।’

Eadmin

Related post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *