হাসপাতালে বাবার বেডের নিচে বসে পড়তেন, এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ–৫

 হাসপাতালে বাবার বেডের নিচে বসে পড়তেন, এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ–৫

বাবা হাসপাতালে ছিলেন দুই মাসের বেশি। ইফতেখার আহমেদ তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। হাসপাতালেই কাটত দিন। ইফতেখার তাই বাবার বেডের নিচে বসে পড়তেন। ৫ মাস ৬ দিন চেতনাহীন থেকে বাবা যখন মারা যান, তাঁর চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি তত দিনে প্রায় নিঃস্ব।

তবু পড়ালেখা ছাড়েননি ইফতেখার। শিক্ষক, শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৫। মোট নম্বর ১ হাজার ২৫৮। রাজশাহী কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়ও সব বিষয়ে জিপিএ–৫ পেয়েছেন এই তরুণ। মোট নম্বর ১ হাজার ২১১।

কলেজে সব বই মা কিনে দিতে পারেননি। বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে পড়তে হয়েছে। ছিল আরও নানা প্রতিবন্ধকতা। তবু কেমন করে লড়াই চালিয়ে গেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই তরুণ?May be an image of text

মেধার পরিচয়

ইফতেখার যে একটু অন্য রকম, ছোটবেলাতেই সেটি টের পাওয়া গিয়েছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় মায়ের হাত ধরে এসেছিলেন প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে। উদ্দেশ্য—গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য নাম নিবন্ধন।

ইফতেখারের মা বলছিলেন, ‘নমুনা প্রশ্ন কি পাওয়া যাবে? তাহলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হতো।’

কিন্তু ছোট্ট ইফতেখার কিছুতেই রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য, ‘প্রশ্ন দেখলে তো পরীক্ষার মজাই শেষ!’

পরীক্ষার ‘মজাটা’ বোঝেন বলেই হয়তো গণিত অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বেশ ভালো করেছিলেন ইফতেখার। পৌঁছেছিলেন জাতীয় পর্বে, এমনকি ক্যাম্পেও।

হার না মানা সংগ্রাম

ইফতেখারের বাবা কামাল উদ্দিন ছিলেন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর মৃত্যুর পর এক রকম অথই সাগরে পড়ে তাঁদের পরিবার। এরপর থেকে রাজশাহী শহরে থাকা–খাওয়ার খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন ইফতেখারের দুলাভাই।May be an image of text

কিন্তু নিজের পড়ালেখার খরচের দায়িত্বটা ইফতেখারের নিজের। নানা রকম বৃত্তি, প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ‘প্রাইজ মানি’ই তাঁর সম্বল। এক সময় মেধাবী এই শিক্ষার্থীর খোঁজ পেয়ে মাসে দুই হাজার টাকা করে পাঠানো শুরু করেন ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। সেটিও বড় স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছে।

সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা থেকে ৩৬ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও কিছু বৃত্তির টাকা দিয়ে ছাগল কিনে লালনপালন করেছেন। ছাগল বিক্রি করে কিছুটা লাভ হয়েছে। এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলেছে পড়ালেখা।

হতাশা পেরিয়ে আশার আলো

এত চেষ্টার পরও কলেজের পরীক্ষায় যখন জিপিএ–৫ এল না, ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন ইফতেখার, ‘মনে হচ্ছিল, আমার মেধা আছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার অভাবে কিছু করতে পারছি না। এভাবে পড়াশোনা করে কী লাভ!’

এক সময় অনলাইনে কোচিং করা শুরু করেন তিনি। নতুন বই ডাউনলোড করে পড়তেন। কিন্তু দিনরাত ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে সময় বাধল আরেক বিপত্তি। চোখে কম দেখা শুরু করেন। পরে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ল্যাপটপে পড়া শুরু করেন। তবু শেষ পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষার তিন দিন আগে তাঁকে চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছে।

সব বাধা পেরিয়েই এইচএসসিতে ভালো ফল পেয়েছেন ইফতেখার আহমেদ। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবোটিকস নিয়ে পড়তে চান।

Eadmin

Related post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *