মনোযোগ টেস্টঃ পুরো লেখাটি কে কে পড়তে পারবে ?
এর মধ্যে হুট করেই মনে পড়ল, চার দিন পর যে আমার পরীক্ষা! পড়তে বসা উচিত। কিন্তু তার আগে যে লেখাটা শেষ করতে হয়। লেখার ডেডলাইন পার হতে দুই ঘণ্টাও বাকি নেই। ফিরে এলাম সেই ল্যাপটপের ব্রাউজারে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার ধাপে। কিন্তু এবার আর আগের কালচক্রে ফিরলাম না। সত্যি সত্যিই লেখা শুরু করলাম (বাহ্! বেশ অনেকখানি লিখেও ফেলেছি দেখা যাচ্ছে!)।
মনোযোগ নিয়ে লিখতে বসে আমি নিজেই যেখানে মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না, সেখানে পাঠকেরা কী করে লেখাটা পড়ার মনোযোগ ধরে রাখবেন!
সত্যি বলতে, এই লেখাটা যদি কেউ না-ও পড়েন, দোষ পুরোপুরি আমার ঘাড়ে চাপানো যাবে না। কারণ, এর অন্তত কিছুটা দায়ভার মানুষের মনোযোগের, বর্তমান সময়ের। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. গ্লোরিয়া মার্কের গবেষণা মতে, ২০০৪ সালেও মানুষ একটি পর্দায় (স্ক্রিন) গড়ে আড়াই মিনিট একটানা মনোযোগ রাখতে পারত। এরপর তা কমে আসে ৭৫ সেকেন্ডে। এখন মানুষের গড় মনোযোগের বিস্তার বা অ্যাটেনশন স্প্যান নাকি মাত্র ৪৫ সেকেন্ড! আর মনোযোগ যে শুধু কমে আসছে তা–ই নয়, একবার কোনো কাজ থেকে মনোযোগ বাবাজি ছুটে গেলে তা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে সময় লাগে ২৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ড। ভাবা যায়!
গ্লোরিয়া মার্কের মতে, মনোযোগ ছুটে যাওয়ার আগে মানুষ গড়ে সাড়ে ১০ মিনিট একটি প্রকল্পে মন দিয়ে কাজ করে। এরপর কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে তো সেই কাজে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে আমরা দ্বিতীয় আরেকটি প্রকল্পের কাজ শুরু করি। তাঁর গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, দ্বিতীয় কাজেও যখন কোনো বাধা পাই, তখন আমরা প্রথম কাজে ফিরে যাওয়ার বদলে তৃতীয় আরেকটা কাজ শুরু করে দিই! এমনিভাবে আমরা পরপর প্রায় চারটা কাজে অল্প অল্প সময় দিয়ে ফিরে যাই সেই প্রথম কাজে। অর্থাৎ মনোযোগ ছুটে গেলে তা আবার ফিরিয়ে আনতে যে ২৫ মিনিট সময় লাগে, সেই সময়টায় আমরা আদতে আলসেমি করি না; বরং অন্য কাজ করি। (যাক, ডেডলাইনের আগে লেখাটা শেষ করতে না পারলে বিভাগীয় সম্পাদককে দেওয়ার মতো একটা অজুহাত পাওয়া গেল!)
কিন্তু এই হতচ্ছাড়া মনোযোগ যেন বারবার ছুটে না যায়, সে জন্য তো তাকে কানমলা দেওয়া যাবে না। তবে মনোযোগ বাড়াতে কানমলাটা নিজেকে দিয়ে দেখতে পারেন! মনোযোগ বাড়াতে আরও যা কাজে আসতে পারে—একসঙ্গে একাধিক কাজ (মাল্টিটাস্কিং) কম করা, প্রতিদিন ব্যায়াম করা, প্রয়োজনীয় কাজের একটা তালিকা তৈরি করা, কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া, কাজের সঙ্গে মিলিয়ে গান বা মিউজিক শোনা।
মনোযোগের সবচেয়ে বড় শত্রু যে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট, আশা করি তা বলে দিতে হবে না। তাই কাজে বসলে ডেস্কটপ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইকনগুলো সরিয়ে ফেলুন, ফোন থেকে অফলাইনে চলে যান। তাতেও কাজ না হলে ফোন বন্ধ করে দিন, অন্য রুমে রেখে আসুন কিংবা ড্রয়ারে রেখে তালা দিয়ে রাখুন।
তবে এত মহাযজ্ঞ করে কাজে বসলেই যে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুরোদমে কাজ করতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। যদি কোনো লাইন বোঝার জন্য দুইবার পড়তে হয় বা মাথায় শব্দগুলো খটমট লাগতে শুরু করে, তবে ছোট্ট একটা বিরতি নিন। ড. গোল্ড মার্কের মতে, বিরতির সময় প্রকৃতির মাঝে ২০ মিনিট হেঁটে নেওয়া হতে পারে সবচেয়ে উপযুক্ত টোটকা। প্রাকৃতিক পরিবেশ না পেলে এমন কোনো কাজ করুন, যাতে মাথা খাটানোর দরকার পড়ে না।
এ ক্ষেত্রে ড. মার্কের এক এমআইটি অধ্যাপক বন্ধুর পছন্দের কাজ কী জানেন? একই রঙের মোজাগুলো একসঙ্গে সাজিয়ে রাখা! আপনি চাইলে চেয়ার কিংবা খাটে স্তূপ হয়ে থাকা জামকাপড়গুলো গুছিয়ে ফেলতে পারেন। কাজে বিরতি নিলে কিন্তু কাজের ক্ষতি হয় না, বরং নতুনভাবে তরতাজা সব চিন্তাভাবনা নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা যায়।
লেখাটি যদি ধৈর্য নিয়ে এত দূর পড়ে থাকেন, তবে আপনার মনোযোগের প্রশংসা করতেই হয়। আর যারা এক লাফে শেষ অংশে এসে পড়ছেন, জি, আপনাকেই বলছি, আপনার মনোযোগের অবস্থা কিন্তু খুবই খারাপ! এক্ষুনি আবার লেখাটা শুরু থেকে পড়ে জেনে নিন, কীভাবে মনোযোগ বাড়াবেন।