নিয়মিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে খোঁজখবরই তোমার ভর্তি প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জ্ঞাত করবে

 নিয়মিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে খোঁজখবরই তোমার ভর্তি প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জ্ঞাত করবে

সফলতা লাভের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। সঠিক সিদ্ধান্ত এবং সঠিক দিকনির্দেশনা সফলতা প্রাপ্তির পথকে সুগম করে। একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় এবং পছন্দের বিষয় নির্ধারণ করা। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় এবং পছন্দের বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় দ্বিধান্বিত থাকেন। তাই এ ব্যাপারে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অবশ্যই বাবা, মা, অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ নিতে হবে। মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরনে ভিন্নতা থাকায় সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। পছন্দের বিষয় নির্ধারণের সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে-বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে বিষয়টির চাহিদা বা সম্ভাবনা কতটুকু, সেটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি নিজের আগ্রহ, দক্ষতা ও সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় এবং পছন্দের বিষয় নির্ধারণ করা উচিত।

সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে কয়েক মাস সময় পাওয়া যায়। এই স্বল্প সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে কৌশলী হওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস যথেষ্ট বড় এবং কঠিন হওয়ায় কোন কোন টপিক পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি আগে খুঁজে বের করতে হবে। সিলেবাসের কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে, কোন অংশ থেকে তুলনামূলকভাবে কম প্রশ্ন হয়, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য যত বেশি সম্ভব বিগত বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করা যেতে পারে। বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ সমাধান করার সময় প্রতিটি প্রশ্নের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং সেই টপিকগুলো পাঠ্যবইয়ে চিহ্নিত করে রাখা উচিত।

পুরো সিলেবাসকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, মধ্যম গুরুত্বপূর্ণ এবং তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ—এই তিনটি অংশে ভাগ করে ফেলতে হবে। অংশগুলোকে তিনটি ভিন্ন রঙের কালির কলম দ্বারা চিহ্নিত করে রাখা যেতে পারে। যদি কোনো বিষয় বা নির্দিষ্ট কোনো টপিকে দুর্বলতা থেকে থাকে, তাহলে পরীক্ষার পূর্বে সেই দুর্বলতা অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাসী হলে নিজে নিজে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। তবে সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। সময়ের সদ্ব্যবহার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে ভর্তি পরীক্ষার আগপর্যন্ত সময়টুকু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া বা অকারণে সময় নষ্ট করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। স্বল্প সময়ে যেহেতু অনেক বড় একটি সিলেবাসের ওপর প্রস্তুতি নিতে হয়, তাই পুরো সিলেবাস বিবেচনায় নিয়ে একটি কার্যকরী রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী পড়াশোনা করা উচিত। তা না হলে সিলেবাস শেষ করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।

ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন বিষয়ে পাঠদান করা হয় এবং বিষয়গুলোর আসনসংখ্যা কত, তা আগে জেনে নিতে হবে। তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রতিযোগিতা সম্পর্কে অনুমান করা যাবে। কবে নাগাদ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে পারে, ভর্তি পরীক্ষায় কোন কোন বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে, কোন বিষয়ে কত নম্বরের প্রশ্ন থাকে, পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা যাবে কি না ইত্যাদি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। এসব বিষয়ে ধারণা পেতে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নজর রাখতে হবে।

ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ভর্তি-ইচ্ছুক বিষয়ের পছন্দক্রম বা সাবজেক্ট চয়েস লিস্ট অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে। ভর্তি-ইচ্ছুক বিষয়ের পছন্দক্রম সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হলে অনেক সময় ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে কিংবা পরে শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভর্তির দিনে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ নির্ধারিত সময়ের আগেই উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতে হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সাধারণত প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটেই দেওয়া থাকে। ভর্তি হওয়ার আগে সব তথ্য অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

নিজের যত্ন নেওয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি নিজের যত্ন নেওয়ার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রচণ্ড মানসিক চাপ অনুভব করেন; পাশাপাশি তাঁরা বিষণ্নতায়ও ভুগতে পারেন। তাই শিক্ষার্থীদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে। সময়মতো খাবার গ্রহণ এবং পরিমিত ঘুমাতে হবে। সব সময় মানসিকভাবে ইতিবাচক ও আনন্দে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এ সময়ে মা-বাবা বা অভিভাবককে অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি দায়িত্ববান হওয়া জরুরি। সন্তান ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কি না, সুস্থ আছে কি না—এসব বিষয়ে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি সন্তানকে সব সময় ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা লাভের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে।

পরামর্শেঃ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক অমিত সরদার

Eadmin

Related post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *