দুই হাতই কেটে ফেলা হয়েছে তারপরেও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে অটল চাকমা
দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ক্ষেত্রপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অটল চাকমা মুখে কলম নিয়ে খাতায় লিখছে। লেখা শেষে সে শোনাল তার জীবনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা। ২০১৫ সালে বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণিতে পড়ত সে। বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়িতে ফেরার পথে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা তারে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তার দুই হাত ঝলসে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাড়ে ছয় মাস চিকিৎসাধীন ছিল। তখন তার দুই হাত কেটে ফেলতে হয়। ডান পাশে বাহুমূল থেকে এবং বাঁ পাশে কনুইয়ের নিচ থেকে তার হাত নেই।
অটল চাকমা বলে, ‘দুই হাত হারানোর পর বাড়িতে বসে মুখে কলম নিয়ে খাতায় লেখার চেষ্টা করতাম। এভাবে লেখা অভ্যাস হয়ে গেল। তখন আবার বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। পঞ্চম শ্রেণিতে আমার রোল ছিল পাঁচ। বর্তমানে ক্ষেত্রপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে আমার রোল নম্বর চার।’
দুই হাত না থাকায় মনে কষ্ট রয়েছে অটলের। তবে মুখ দিয়ে লিখে পড়াশোনা করতে পারছে—এতেই সে খুশি। আর সে শরীরে কৃত্রিম হাত লাগাতে চায়। তবে সংসারে টানাটানি থাকায় দরিদ্র মা–বাবার পক্ষে কৃত্রিম হাত লাগানো সম্ভব হয়নি। অটল চাকমা বলে, সে যত পর্যন্ত সম্ভব পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। ফুটবল তার প্রিয় খেলা। সে ভবিষ্যতে একজন ভালো ফুটবলার হতে চায়।
অটল চাকমার মা ইতি চাকমা বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর আমরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সাড়ে ছয় মাস চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়। দুই হাত কেটে ফেলার পর সে হাত কোথায় জিজ্ঞেস করে কান্না করত। এখন সে স্বাভাবিক হয়েছে। ছেলের জন্য কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত টাকা খরচ করে কৃত্রিম হাত লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ক্ষেত্রপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় চাকমা বলেন, অটল চাকমা খুবই মেধাবী। সে কখনো বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে না। সহপাঠীদের সঙ্গে হেসেখেলে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে। সে পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী। সে মুখে লিখলেও তার লেখা খুবই সুন্দর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, ‘ক্ষেত্রপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে অদম্য মেধাবী অটল চাকমার দেখা পেয়েছি। তার দুই হাত না থাকলেও সে খুব সুন্দরভাবে মুখ দিয়ে লিখতে পারে। নতুন বছরের পোশাক কেনার জন্য তাকে দুই হাজার টাকা উপহার দেওয়া হয়েছে। পড়াশোনার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সাহায্য–সহযোগিতা করা হবে।’